নিজস্ব প্রতিনিধি :উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ)
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চাইতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দলের কিছু ভিন্নতা রয়েছে, মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে। সেই পার্থক্য হলো- একে বারে ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতা নির্বাচন করা হয় দলের গঠনতন্ত্র ও প্রটোকল মেনে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সু-শৃঙ্খল দল।তাই যে কারও হুট করে নেতা হবার সুযোগ নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে। দলের জন্য ত্যাগী, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা নিবেদিত প্রাণ এবং নেতা-কর্মীদের সমর্থন ও মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন করা হয়। কেন্দ্রের কোনো সিদ্ধান্ত দলের নিম্ন পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সুশৃঙ্খল ভাবে মেনে চলা হয়। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিরাট গুরুত্ব বহন করে। সেই গুরুত্বকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা বাংলাদেশে দুই শতাধিক সংসদীয় আসনে ইতোমধ্যেই প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এক্ষেত্রে দলের জন্য ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, সৎ, দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীকে বেছে নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচনে তাদের প্রার্থী দিয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জে ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থীতা ঘোষণা করা হয়েছে। এই জন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোনো প্রকার বিরোধ, দ্বন্দ্ব ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়নি যা অন্যান্য দলে একেবারেই সম্ভব নয়। সিরাজগঞ্জে ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর-সদর আংশিক), সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ), সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী), সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলংগা) ও সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) এই পাঁচটিতে প্রার্থীতা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে (তাড়াশ রায়গঞ্জ) প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। সিরাজগঞ্জে-৪ (উল্লাপাড়া -সলংগা) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান কে সংসদ সদস্য নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আলহাজ্ব মাওলানা মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম খাঁন বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলাধীন উল্লাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ডিগ্রীরচর এলাকার নওকৈড় গ্রামে ১৯৬৬ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন বাংলাদেশ মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে ডিগ্রীরচর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল, পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম ও ফাজিল এবং ১৯৮৪ সালে সিরাজগঞ্জ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী শিক্ষা বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী এবং ১৯৯২ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা অবস্থায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের (ছাত্র সংগঠন) সাথে যুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৪-১৯৯৫ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন।শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন ১লা জানুয়ারী ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে সদস্যপদ পরিত্যাগ করেন। ১৯৯৬ সালেই তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকন (সদস্য) মনোনীত হন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য। তিনি ঢাকা মহানগরী শাখার নায়েবে আমীরও ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি নানা সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নেন। বর্তমানে তিনি কনফিডেন্স ডিজাইন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন।মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন ইকরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ), চেংটিয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ), নন্দকুশা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ), আল-ইসলাহ পাঠাগার (উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ) এবং ইসলামী সমাজ কল্যাণ সংসদ (মনোহর, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঢাকা ক্যাডেট মাদ্রাসা (ঢাকা), ইকরা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। তুখোড় ও ত্যাগী রাজনীতিবিদ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান রাজনীতি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিষ্ট সরকারের রোশানলে পরে মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বারবার। শুধু বিগত ১৫ বছরেরই আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কয়েক বার তাকে জেলে যেতে হয় এবং বিভিন্ন সময়ে প্রায় তিন বছর তিনি কারাভোগ করেন । সিরাজগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনে জামায়াত কর্তৃক মনোনয়ন পাওয়ার আগে থেকেই মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান তার নির্বাচনী এলাকা উল্লাপাড়া -সলংগায় যাচ্ছেন দলের নেতা-কর্মী সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করছেন সমর্থন পাচ্ছেন তাদের। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, দলের চিন্তা, দল ক্ষমতায় গেলে কি কি করা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরছেন জনগণের মাঝে। তিনি সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। বিগত দিনের দুঃশাসন সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করছেন। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য দল করি। কিন্তু বিগত দিনে আমাদের দলকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়নি। মামলা হামলা দিয়ে আমাদের হাজার হাজার নেতা- কর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। দেশের মানুষ বিগত দিনগুলোতে রাষ্ট্রীয় শাসন দেখেছে। সেটা কোনো শাসন ছিল না। ছিল শোষন এবং মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করার মহরা। অতীতে মানুষ যাদেখেছে, যা ঘটেছে আর তা দেখতে চায় না। বিগত দিনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে দেশের মানুষ পরিবর্তন চায় তবে সেই পরিবর্তন যেন জনগণের স্বার্থে হয়। তাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে দুঃশাসন নয় জনগণের সেবক হয়ে কাজ করবে। আমি একজন কর্মী হিসেবে দলের আদেশ নির্দেশ মেনে উল্লাপাড়ার সকল সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরও বলেন, বিগত দিনে দেশের উন্নয়নের কথা বলা হলেও কার্যত সুষম কোনো উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়নে বৈষম্য করা হয়েছে যার কারণে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সঠিক উন্নয়ন পাননি। তিনি আরও বলেন সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে, সারা দেশের সাথে উল্লাপাড়াতেও পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন করা হয়নি। ভিন্নমতের ভিন্ন দলের মানুষ উন্নয়ন ও সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সহ সারা দেশে এখনো লাখ লাখ বেকার রয়েছে। আমরা সরকারে গেলে বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারিভাবে সুষমভাবে বিভিন্ন মিল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হবে। পাশাপাশি সিরাজগঞ্জের ও দেশের শিল্প উদ্যেক্তাদের অনুপ্রাণিত করে উল্লাপাড়া -সলংগায় বেসরকারি ভাবে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হবে। উল্লাপাড়ার উন্নয়ন বৈষম্য দূর করা হবে। এখানে প্রয়োজনীয় শিল্প- কারাখানা গড়ে তুলতে কাজ করা হবে। চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও বাজারের উন্নয়ন করা হবে যার মাধ্যমে উৎপাদিত মরিচ, বাদাম ও ভুট্টা সহ বিভিন্ন ফসল চরবাসী নায্য দামে বিক্রি করতে পারেন, লাভবান হতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লাপাড়ার উন্নয়নে বৈষম্যমুক্ত ইনসাফ মূলক সমাজ কায়েম করা হবে। মাদক সহ নানা প্রকার নেশায় পড়ে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করা হয়েছে তাদের মেধাহীন করে ফেলা হয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে উল্লাপাড়াকে মাদকমুক্ত করবো। যুবসমাজকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হবে এবং মাদককে প্রতিরোধ করা হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়ে তিনি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুতে বিশ্বাস করে না এবং তা সমর্থনও করে না। আমরা যেমন এই দেশের নাগরিক তেমনি এখানে বসবাসরত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সবাই এদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রীয় ক্ষতায় গেলে এখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকবে। যার যার ধর্মের আচার অনুষ্ঠান তাদের মতো করে করবে। তিনি আরও বলেন, দেশের সকল ধর্মের, বর্ণের, গোষ্ঠি ও শ্রেণি পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে তাদের এক সাথে করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি মডেল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ।পৃথিবীর বুকে বাংলাদেকে একটি মর্যাদাশীল জাতি ও দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। আর দেশের এই সার্বিক উন্নয়ন ও নতুন পথে চলার সাথী হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্র শ্রেণি পেশার মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন চায়। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমি উল্লাপাড়া থেকে নির্বাচিত হলে সকল ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও শ্রেণি পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে দলমতের উর্দ্ধে উঠে উল্লাপাড়ার সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। এক্ষেত্রে তিনি উল্লাপাড়াবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
0 coment rios: