অশোক ব্যানার্জী
:উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জ। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুলগোল চতুর একটি গুরুত্বপূর্ণস্থান। কারন হাটিকুমুরুল গোল চত্বর হয়ে যমুনা সেতু পারাপার করে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন চলাচল করে থাকে। ঈদের সময় এই যানবাহন চলাচলের পরিমান দ্বিগুন বেড়ে যায়। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারনে যমুনা সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে হাটিকুমরুল হয়ে উত্তরে চান্দাইকোনা, দক্ষিণে শাহজাদপুর এবং পশ্চিমে নাটোরের বনপাড়া সড়কে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পরেন যাত্রী সাধারন ও চালকরা। এসময় যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ আইন- শৃংখলা বাহিনীকে হিমশীম খেতে হয়। রাতদিন ২৪ ঘন্টা রাস্তায় থেকে আইন-শৃংখলা বাহিনীকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ টাঙ্গাইলের এলাঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হয়ে রংপুর পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার পাশাপাশি হাটিকুমরুল গোল চত্বরে নির্মান করা হচ্ছে আধুনিক সকল সুবিধা দিয়ে আর্ন্তজাতিক মানের ইন্টারচেইঞ্জ। এই ইন্টারচেইঞ্জ নির্মান কাজ শেষ হলে যানজট থাকবে না, যাত্রীরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের গৌন্তব্যে পৌছাতে পারবেন এবং যানজটের ভোগান্তি কমে যাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যানজট থেকে জনভোগান্তি কমাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ হাটিকুমরুলে নির্মান করছে আর্ন্তজাতিক মানের ইন্টারচেইঞ্জ। সাসেক-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছেদেশের মধ্যে সব থেকে নান্দনিক ও দৃষ্টি নন্দন আধুনিক মানের ইন্টারচেইঞ্জ। এর নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করছে এবং চালুর পর থেকে তিন বছর ইন্টারচেইঞ্জ রক্ষনাবেক্ষন করবে চায়না রেলওয়ে কনন্ট্রোশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিঃ (সিআরবিজি)। এর নির্মান কাজ শুরু করা হয় ২০২২ সালে এবং শেষ হাবার কথা ছিলো ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু জমি অধিগ্রহনের জটিলতায় প্রায় দেড়বছর সময় নষ্ট হয়ে যায় যার কারনে সময় বৃদ্ধি করা হয় এবং ৭৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ইন্টারচেইঞ্জের কাজ ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবার কথা রয়েছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন নির্মান কাজ দ্রুত করা হচ্ছে এবং গুণগতমান ঠিক রেখে বর্ধিত নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এর নির্মান কাজ শেষ করে যান বাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া যাবে।প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন দেশের সড়ক অবকাঠামোর মধ্যে হাটিকুমরুলে নির্মান করা ইন্টারচেইঞ্জে এই প্রথম ইন্টেলিজেনস ট্রান্টপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতির সুবিধা হলো আইটিএস ব্যবহার করার কারনে যানবাহন ইন্টারচেইঞ্জে চলাচলের সময় স্বয়ংক্রিয় ভাবে আগাম শতর্কতা জানাবে যানবাহনের গতি, যানজট, দুর্ঘটনার বিষয় সেই সাথে করণীয় বিষয়ে নির্দেশনারও সংকেত জানা যাবে। যানবাহন প্রয়োজন মতো তার গতিপথ বদলাতে পারবে এর কারনে দুর্ঘটনা কম হবেআধুনিক সকল সুবিধা দিয়ে দৃষ্টি নন্দন আর্ন্তজাতিক মানের এই ইন্টারডেইঞ্জ নির্মান কাজ শেষ হলে এক কিলোমিটার দুর থেকে ভাগ হয়ে যাবে বিভিন্ন জেলার যানবাহন। ধীরগতিরযানবাহন চলাচলের জন্য থাকছে সার্ভিস রোড। থাকবে জনসাধারন চলাচলের জন্য ফুটওভার ও ওয়ার্কওয়ে। যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রাকচালদের জন্য থাকবে আধুনিক মানের পৃথক বিশ্রামাগার। নির্মান করা হচ্ছে বিশ্বমানের সার্ভিস এরিয়া। যেখানে পাঁচশত যানবাহন একসাথে দাঁড়াতে পারবে। যাত্রীর সুবিধার জন্য থাকবে নিরাপত্তা সম্বলিত উন্নত মানের হোটেল রেস্তোরা। এছাড়া ইন্টারচেইঞ্জ পরিচালনা ও রক্ষাবেক্ষনের জন্য নির্মান করা হচ্ছে আধুনিক মানের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। প্রায় ১৪৭ একর বিশাল জায়গা নিয়ে ইন্টারচেইঞ্জ। আর ইন্টারচেইঞ্জ এলাকার নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দেয়া হচ্ছে। এর জন্য নির্মান করা হয়েছে প্রায় ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রাচীর। সব মিলিয়ে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে হাটিকুমরুলে।নির্মিত হচ্ছেসিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাট্রিজ পরিচালক প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে যানজট একটি বড় সমস্যা। ইন্টারচেইঞ্জ নির্মানের কারনে সহজে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহি যানবাহন তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছাতে পারবে এর কারনে এই অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি আসবে। সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান সুমেল জানান সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক নির্মিত ইন্টারচেইঞ্জ এই দপ্তরের একটি যুগান্তকারি প্রদক্ষেপ। এর নির্মান কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বদলে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় গতি আসবে। সেই সাথে যাত্রী ও চালকদের কোন ভোগান্তি থাকবে না। ট্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখতে সময় ও অর্থ ব্যয় কমে যাবে এর জন্য সরকারের অর্থেরসাশ্রয় হবে।হাটিকুমরুল ইন্টারচেইঞ্জ প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, এই ইন্টারচেইঞ্জ দেশের অন্যতম বৃহৎ আধুনিক আর্ন্তজাতিক মানের একটি প্রকল্প সিরাজগঞ্জে যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের হাটিকুমরুল গোল চতুর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই গোল চতুর ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন উত্তর-দক্ষিণবঙ্গ ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করে থাকে। যার কারনে এখানে প্রায়ই যাজজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন শতশত যাত্রী ও চালকরা। দুর্ভোগ ও ভোগান্তি কমাতে সড়ক জনপথ বিভাগ এখানে একটি আধুনিক মানের ইন্টারচেইঞ্জ নির্মান করছেএর কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪৮ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, জমি অধিগ্রহনের জটিলতায় কাজ শুরু করতে ১৬ মাস দেরী হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ইন্টারচেইঞ্জ নির্মিত হলে ঢাকার সাথে উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন ও সহজ হবে। পাল্টে যাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। যার কারনে উত্তরাঞ্চল মানুষের ব্যবসা- বণিজ্যে গতি আসবে তাদের আর্থিক সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এর আংশিক নির্মান কাজ শেষ হওয়ায় ঈদকে সামনে রেখে যানজটের ভোগান্তি কমাতে চলতি মাসের শেষের দিকে ইন্টারচেইঞ্জর সার্ভিস সড়ক খুলে দেওয়া হবে। এতে করে যানজট সৃষ্টির সম্ভাবনা একে বারেই কমে যাবে যার কারনে এবছরের ঈদযাত্রা অনেকটা নির্বিঘ্ন ও স্বস্তির হবে বলে আশা করেন তিনি।
0 coment rios: